গাছের জন্য সঠিক কোকোপিট নির্বাচন | Perfect Cocopeat for Plants

যারা ছাদ বাগান বা টবে গাছ লাগাই, তারা কম বেশি সবাই কোকোপিট সম্পর্কে কিছুটা জানি। আজকে এই কোকোপিট সম্পর্কেই আলোচনা করার চেষ্টা করছি।
কোকোপিট কি?
কোকোপিট হল, নারিকেল এর খোসা ছাড়ানোর পর সেখান থেকে ফাইবার বের করে অনেক রকম কাজ করা হয়। ফাইবার বের করে নেওয়ার পর যেই ঝুরঝুরা ছোট অংশ পরে থাকে, সেটাই কোকোপিট।
কেন ব্যবহার করতে হয়?
টবে মাটি ব্যবহার করলে অনেক ওজন হয়। মাটি কমপ্যাক্ট হয়ে শিকড় এর বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে। গরমের সময় খুব দ্রুত পানি শুকিয়ে যায়। কোকোপিট ব্যবহার করলে টবের ওজন কম হয়। মাজি ঝুরঝুরে রাখতে সাহায্য করে। ভিতরে বাতাস চলাচল করতে সাহায্য করে। গরমের সময় গাছে পানি দিলে কিছু পানি ধরে রাখে। আর বর্ষার সময় অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যেতে সাহায্য করে। ড্রেনেজ সেস্টেম ভালো রাখে।
পুষ্টিগুন কি কি?
কোকোপিটে কোন পুষ্টিগুন নেই। এটা দিলেও অবশ্যই অন্যান্য সার প্রয়োগ করতে হবে।
কেমন কোকোপিট দিতে হবে?
কোকোপিট দিতে হলে অবশ্যই প্রসেস করা গুলো দিতে হবে। বাজারে কোকোপিট ব্লক কিনতে পাওয়া যায়। এগুলো প্রসেস করাই থাকে। ব্লক ব্যবহার করতে হলে প্রথমে পানিতে ভিজিয়ে ঝুরঝুরা করে নিয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। তবে, বর্তমানে কোকোডাস্ট কিনতে পাওয়া যায়। এটা অনেক সময় প্রসেস করা থাকে। আবার প্রসেস করা ছাড়াও থাকে। যেগুলো প্রসেস করা নেই, সেগুলো কখনোই ব্যবহার করা উচিত না।
সতর্কতাঃ
কোকোপিট যদি প্রসেস করা না হয়, তাহলে সেগুলো ব্যবহার করলে গাছের ক্ষতি হয়। বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলে প্রচুর নারিকেল হয়। সেখানকার পানি লবনাক্ত হওয়ায় কোকোপিট-ও লবনাক্ত হয়। প্রসেস করার জন্য এই টাকটা কোকোডাস্ট পানিতে চুবিয়ে রাখতে হয় কয়েকমাস। সম্পুর্নরূপে পচে গেলে সেটা আবার পানিতে ধুয়ে এবং শুকিয়ে ব্যবহার করার উপযোগী হয়। প্রসেস না করা হলে লবনের কারনে গাছের পঁচন ধরে গাছ নষ্ট হয়ে যাবে। তখন ঐ মিডিয়াতে আর অন্য কোন গাছ হবে না। কোকোপিট ব্যবহার করলে অবশ্যই প্রসেস করা গুলোই ব্যবহার করতে হবে।
কি দেখে কিনতে হবে?
অনলাইন বা অফলাইনে এটা কিনতে পাওয়া যায়। কোকোপিট ব্লক কিনলে আপনি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু, কোকোডাস্ট কিনলে, কেনার সময় অবশ্যই সেলারের কাছ থেকে জেনে নিবেন, সেটা ভেজা না শুকনা। একটা ৪.৫-৫ কেজির ব্লক থেকে ১৫-২০ কেজি ভেজা কোকোপিট বানানো যায়। একটি ৫০ কেজির বড় বস্তায় শুকনা কোকোপিট ১৫-১৮ কেজি আটবে। অনেক সময় তার কম-ও হয়। কিন্তু, সেলার যদি বলে ১০% ময়েশ্চার থাকবে, তাহলে সেখানে ওজন হতে পারে ৪৫-৫০ কেজি বা তারও বেশি। অনলাইনে সেলাররা সব সময় ভেজা কোকোপিট বিক্রি করে। তবে, অনেককেই অনুরোধ করলে শুকিয়ে বিক্রি করে।

কিভাবে ময়েশ্চার মাপতে হবে?
বাজারে মাটির জন্য পিএইচ মিটার কিনতে পাওয়া যায়। এটা দিয়ে আপনি মিডিয়ার ময়েশ্চার, পিএইচ এবং আলো মাপতে পারবেন। পিএইচ মিটারে সর্বোচ্চ ০-১০% পর্যন্ত ময়েশ্চার মাপতে পারবেন। তাই, সেলার যদি বলে ১০%, সেখানে যদি ২০%-ও ময়েশ্চার থাকে, এটা ধরা যাবে না।

কিভাবে চিনবেন কোকোপিট পুরাতন বা নতুন?
নতুন কোকোপিট এর রং ইটের গুরার মতো দেখা যায়। দানা গুলো বড় বড় হয়। ফাইবারের সাথে দানাগুলো লেগে থাকে। অন্যদিকে প্রসেস করা বা পুরাতন কোকোপিট কালো রং এর হয়। গুরা গুলো খুব মিহি হয়। দানাগুলো সাধারনত ফাইবারের সাথে লেগে থাকে না। অল্প ফাইবার থাকলেও সব আলাদা থাকে।

ব্যবহারের নিয়মঃ
৩ ভাগের একভাগ কোকোপিট, ১ ভাগ বেলে দোআঁশ মাটি আর ১ ভাগ ভার্মি-কম্পোস্ট বা গোবর সার দিয়ে মিডিয়া তৈরি করতে হবে। গোবর সার বলতে কখনোই শুকনা গোবর বা টাটকা গোবর ব্যবহার করা যাবে না। সার কম্পোস্ট হলে কালো বর্ন হয়।
আরও পড়তে পারেনঃ
এ্যাডেনিয়াম মিডিয়া তৈরি
এ্যাডেনিয়ামের পাতা কাটার উপকারিতা ও অপকারিতা